ভাবুন তো এমন একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির কথা যেখানে কর্মীরা যখন খুশি তখন ছুটি নিতে পারেন, নেই ব্যয় করার কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা। নো রুলস-ই যাদের নীতি। অবিশ্বাস্য ঠেকলেও তা বাস্তব। বলছি তুমুল জনপ্রিয় ইন্টারনেট স্ট্রিমিং মিডিয়া জায়ান্ট নেটফ্লিক্সের কথা।
তবে আজকের এ নেটফ্লিক্সের পথ চলার শুরুটা সহজ ছিল না মোটেও। শুরুটা ডিভিডি ভাড়া দেবার সামান্য ব্যবসা থেকে। কীভাবে ডিভিডি ভাড়া দেবার ব্যবসা থেকে নেটফ্লিক্স হয়ে উঠল বিশ্বের অন্যতম অনলাইন স্ট্রিমিং এন্টারটেইনমেন্ট সার্ভিস কোম্পানি- তা নিয়েই থাকছে আজকের WEEBIZZ Business Story।
১৯৯৭ সাল। রিড হেস্টিংস ও মার্ক রেন্ডলফ একই অফিসে কাজ করেন। কাজের সুবাদে প্রতিদিন অফিস যেতে গাড়ি শেয়ারিং করে থাকেন। এ যাত্রাসময়েই মার্ক রিডকে বিভিন্ন আইডিয়া শেয়ার করতেন আর রিড সেটি নাকচ করতেন এ বলে যে, দ্যাট উইল নেভার ওয়ার্ক।
নানান ভাবনা-চিন্তার ময়নাতদন্তের পর তারা ঠিক করেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডিভিডি ভাড়া দেবেন। কারণ, সিনেমা দেখার চাহিদা প্রচুর। যদিও সবখানেই ব্লকবাস্টারের দোকান রয়েছে। ব্লকবাস্টার হলো তৎকালীন সময়ের একটি ভিডিডি রেন্টাল জায়ান্ট কোম্পানি যাদের ব্যবসা পৃথিবীব্যাপী বিস্তৃত ছিলো। কিন্তু তাদের ভিডিডি ভাড়া নেয়ার প্রক্রিয়ায় বেশকিছু নীতিমালা ছিলো। যেমন অতিরিক্ত সময় ধরে ডিভিডি রাখার কারণে জরিমানা গুনতে হত। নেটফ্লিক্স তা সহজ করে দিলো। মেইল ডাকযোগে পৌঁছে যাবে সিনেমা আপনার ঘরে তাও মাত্র ৫ ডলারে! শর্ত একটাই, পুরাতন ডিভিডি ফেরত দেয়ার আগ পর্যন্ত নতুন কোন ডিভিডি ভাড়া নিতে পারবেন না। তবে ফেরত দেয়ার যেহেতু কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা ও জরিমানা গোণার ঝামেলা পোহাতে হয় না তাই জনপ্রিয় উঠতে থাকলো নেটফ্লিক্স। ১৯৯৭ সালের আগস্ট মাসে আত্মপ্রকাশ করলো নেটফ্লিক্স যা বর্তমান দুনিয়ার সিনেমা ডিস্ট্রিবিউশন ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে ইতোমধ্যে।
এই সময়ে পুরোনো কয়েকজন কর্মী ও ১০০০ টাইটেল নেটফ্লিক্সের ছিল। আর শুরু করার জন্য ২.৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করলেন রিড হেস্টিংস।
১৯৯৮ সালে তারা প্রতি ডিভিডি ভাড়ার পরিবর্তে গ্রাহকপদ্ধতি প্রচলন করলেন। মানে হলো, আপনি এবার প্রতি মাসে একটা ফি দিয়ে সারা মাসে যতখুশি সিনেমা দেখতে পারবেন। নতুন এই ব্যবসার মডেল বর্তমানে নেটফ্লিক্সের স্ট্রিমিং সার্ভিসের অনুরূপ। নতুন গৃহীত এই ব্যবসার মডেলে তাদের গ্রাহকসংখ্যা অভাবনীয় গতিতে বাড়তে শুরু করে। এ সময় মার্ক ও রিড জেফ বেজোস কে অনুরোধ করেন নেটফ্লিক্সকে কিনে নিতে। জেফ বেজোস ১৪ থেকে ১৬ মিলিয়ন ডলার সেটির দাম নির্ধারণ করেন। মার্কের কাছে যথেষ্ট মনে হলেও বিক্রি থেকে সরে আসেন রিড এবং তারা পুনরায় ব্যবসায় মনোযোগ দেন।
২০০০ সালে এসে নেটফ্লিক্স ভাবলো ব্লকবাস্টারের সাথে প্রতিযোগিতার বদলে পার্টনারশিপ করা উচিত। রিড নেটফ্লিক্সের ৪৯% স্টেক ব্লকবাস্টারের কাছে বিক্রি করার মধ্য দিয়ে ব্লকবাস্টারের সাথে ব্লকবাস্টার নামে একীভূত হওয়ার প্রস্তাব দেন। নেটফ্লিক্সের জন্য তিনি চাইলেন ৫০ মিলিয়ন ডলার, বিনিময়ে নেটফ্লিক্স হবে ব্লকবাস্টারের অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিস। প্রস্তাবে রাজি হলোনা ব্লকবাস্টারের সিইও।
পরবর্তীতে ২০০২ সালে ৬ লাখ গ্রাহক নিয়ে শেয়ারবাজারে চলে আসে নেটফ্লিক্স। ১৫ ডলারে ৫৫ লাখ শেয়ার ছাড়েন তারা। বছর শেষে গ্রাহক সংখ্যা হয় ৮ লাখ। তার পর থেকে তাদের গ্রাহক সংখ্যা অনেকটা জ্যামিতিক গতিতেই বাড়তে থাকে। ২০০৫ সালে তাদের গ্রাহক সংখ্যা ৫০ লাখে দাঁড়ায়। ২০০৭ সালে তারা তাদের স্ট্রিমিং সার্ভিস শুরু করে ‘ওয়াচ নাও’ নামে।
– বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের ১৫% নেটফ্লিক্সে ব্যয় হয়। ইন্টারনেট ট্রাফিকের সবচে বড় যোগানদাতা নেটফ্লিক্স। বিষয়টি এমন যে, উত্তর আমেরিকার রাত ৭টা থেকে ৯টার প্রাইম টাইমে আপনি যা দেখেন তা পিক্সেলেটেড বা দৃশ্যমানতায় সামান্যতম অস্পষ্টতা পরিলক্ষিত হয়, যার কারণ নানা প্রান্ত থেকে নেটফ্লিক্সের মিলিয়ন মিলিয়ন ব্যবহারকারীর একই সময়ে স্ট্রিমিং করা।
– বর্তমানে ১৯০ টি দেশের ২০ কোটির বেশি গ্রাহক রয়েছে নেটফ্লিক্সের। আপনি যখন এই ভিডিওটি দেখছেন ততক্ষণে ডিভিডি ভাড়া দেয়া থেকে শুরু করা এই কোম্পানীর মার্কেট ক্যাপিটাল ইতোমধ্যে ২২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।